এসএ খালেক
সমকাল প্রতিবেদক
মিরপুর ও পল্লবী নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৪ আসন থেকে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হয়েছেন এসএ খালেক। অভিযোগ রয়েছে, একাত্তরে তিনি ছিলেন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দালাল ও রাজাকার। বিএনপির সাবেক সাংসদ এমএ খালেক পাকসেনাদের হত্যাযজ্ঞের নেতৃত্বদানকারী ইয়াহিয়া খানের প্রত্যক্ষ সহযোগী ছিলেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। তার স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার কথা জানা যায় একাত্তরে ঢাকার মোহাম্মদপুরে ইয়াহিয়া খানের সফরের আলোকচিত্র থেকে। একাত্তরে ঢাকা যখন মৃত্যুপুরী, তখন এসএ খালেক ঢাকা শহরে, বিশেষ করে মিরপুর, মোহাম্মদপুর ও পল্লবী এলাকায় পাকসেনাদের বাঙালি গণহত্যায় প্রত্যক্ষ সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন বলে স্থানীয় অনেকে জানান।
ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি এ বছরের ৩ এপ্রিল প্রকাশিত যুদ্ধাপরাধীর তালিকায় এসএ খালেককে শান্তি কমিটির সদস্য হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে- ‘শান্তি কমিটি গঠন করার পর ...ও আবদুল খালেককে লালবাগ থানার সংযোগ অফিসার হিসেবে নিয়োগ করে।’
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি ২০০১ সালে প্রকাশিত ‘রাজাকারমুক্ত সংসদ চাই’ শীর্ষক পুস্তিকায় এসএ খালেকের স্বাধীনতাবিরোধী বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেছে।
ওই পুস্তিকায় বলা হয়েছে- “বর্তমান মিরপুর ও পল্লবী এলাকা নিয়ে একাত্তরে গঠিত হয়েছিল ‘মিরপুর ইউনিয়ন’। তখন মিরপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য ছিলেন ১১ জন। সংক্ষেপে এদের বলা হতো ‘বিডি’ মেম্বার। এগারো বিডি মেম্বারের মধ্যে সবসময় পাঁচজন বিহারি ও ছয়জন বাঙালি সদস্য নির্বাচিত হতেন। এই ১১ সদস্যের ভোটে মিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন। বরাবরই বাঙালি ছয় সদস্যের মধ্যে এসএ খালেক থাকতেন। কিন্তু বাঙালি হয়েও তিনি প্রতি নির্বাচনে ভোট দিতেন বিহারিদের। এর ফলে সবসময় মিরপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হতেন একজন ‘বিহারি’। সেই সূত্র ধরেই তিনি একাত্তরে বিহারিদের সঙ্গে জোট বেঁধে নেমে পড়েছিলেন বাঙালি নিধনযজ্ঞে।”
ওই পুস্তিকায় বিভিন্ন সময় এসএ খালেক নিজেকে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক দাবি করে একাত্তরে তার বিউটি সিনেমা হল পুড়িয়ে দেওয়া ও তার জেলে যাওয়ার প্রকৃত ঘটনার কথাও উল্লেখ করা হয়। তাতে বলা হয়- ‘...সেগুলো মোটেই সত্য নয়। এসএ খালেক বিউটি সিনেমা হলের এয়ার কন্ডিশন স্থাপনের জন্য এক বিহারির কাছ থেকে অর্থঋণ নিয়েছিলেন।
কিন্তু সেই অর্থ পরিশোধ না করায় একাত্তর সালে ওই বিহারি সিনেমা হলে আগুন লাগিয়ে দেন। এমনকি ওই বিহারি এস এ খালেকের বিরুদ্ধে মামলাও করেন।
ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এসএ খালেক একাত্তর সালে গ্রেফতার হন ও জেলে যান। অথচ দেশ স্বাধীনের পর এসএ খালেক সত্য গোপন করে মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বিউটি সিনেমা হল পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়েছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে।’
লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির সম্পাদিত ‘একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার’ গ্রন্থে মুক্তিযুদ্ধকালে ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে এসএ খালেকের একটি আলোকচিত্র রয়েছে। ওই গ্রন্থে বলা হয়েছে, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদারদের কিছু দালালের সমন্বয়ে গঠিত শান্তি কমিটির সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন এসএ খালেক। তার এই স্বাধীনতাবিরোধী ভূমিকার কথা ’৭১ ও ’৭২-এর পত্রপত্রিকায়ও উল্লেখ রয়েছে।’
২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে এসএ খালেক বিএনপির টিকিটে এ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। এর আগে ’৯৬ সালের নির্বাচনে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন তিনি।
দৈনিক সমকাল, ১৮ ডিসেম্বর, ২০০৮
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন