১৯৭১ সালের এই দিনে প্রতিবাদ প্রতিরোধ বিদ্রোহ বিক্ষোভে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠেছিল। শেকল ছেঁড়ার অদম্য আকাঙ্ক্ষায় দুরন্ত দুর্বার হয়ে উঠছিল বীর বাঙালী জাতি। একাত্তরের এদিন চির পরিচিত শাপলাকে আমাদের জাতীয় ফুল করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শিল্পী কামরুল হাসানের আহ্বানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনে আয়োজিত শিল্পীদের এক সভাতে এ ঘোষণা দেয়া হয়। ঘোষণা শেষে মুক্তিকামী মানুষকে সেদিন আরও বেশি উৎসাহী করে তুলতে তাঁরা প্রতিবাদী পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুন বিলি করেন।
একাত্তরের ১১ মার্চ জাতিসংঘের তদানীন্তন মহাসচিব উ থান্ট এক নির্দেশে বলেন, পূর্ব পাকিস্তানে কর্মরত জাতিসংঘের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী যেন সদর দফতরে ফিরে যান। এ নির্দেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ক্ষুব্ধ বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, বাংলাদেশের মানুষও এ পৃথিবীর বাসিন্দা। তাদের প্রতিও জাতিসংঘের দায়িত্ব রয়েছে।
অন্যদিকে ক্রমেই স্তিমিত হতে থাকে পাকিস্তানী বাহিনীর কর্মকাণ্ড। লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের ফলেই পূর্ব বাংলায় থাকা পাকিস্তানী সামরিক জান্তারা দমে যেতে থাকে। মার্চের শুরুতে পতাকা উত্তোলন এবং ইশতেহার পাঠের পর থেকে বাঙালীর স্বাধীনতাপ্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষা আরও তীব্র হতে থাকে। পেশাজীবীরা পথে নেমে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে।
এই দিনে পূর্ব পাকিস্তানের সিভিল সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশন বাঙালীর স্বাধীনতা আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে। তারা আন্দোলনে অর্থের জোগান দিতে তাদের একদিনের বেতন দেয়ার ঘোষণা দেন। এ দিনে রাস্তায় নেমে আসেন শিল্পী, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কর্মজীবী সবাই। শ্লোগানে শ্লোগানে মাতিয়ে রাখে ঢাকার রাজপথ। পূর্ব পাকিস্তানের সাংবাদিক ইউনিয়ন আন্দোলনকে জোরদার করতে, আরও সংঘবদ্ধ করতে রাজপথে নেমে আসে। পাকিস্তানবিরোধী শ্লোগানে রাজপথকে উত্তাল করে তোলে জনতা। শিল্পী মুর্তজা বশীর ও কাইয়ুম চৌধুরীর নেতৃত্বে এ দিন চারুশিল্প সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামে এ পরিষদ বিশেষ ভূমিকা রাখে।
একাত্তরের মার্চ মাসের দিনগুলো ছিল থমথমে, উৎকণ্ঠা আশঙ্কায় পরিপূর্ণ। চাপা উদ্বেগে অস্থিরতা অনিশ্চয়তার আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছিল সাড়ে সাত কোটি বাঙালী। কি ঘটবে, কী ঘটতে যাচ্ছে_ তা নিয়ে চিন্তিত উৎকণ্ঠিত ছিলেন সকলেই। অবরুদ্ধ গণমানুষ ভিতরে ভিতরে প্রস্তুত হচ্ছিলেন চূড়ান্ত লড়াইয়ের জন্য। লৰ্য একটাই- নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা। কারণ ততদিনে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট হয়ে উঠছিল যে, পশ্চিম পাকিসত্মানী বেনিয়া দুর্বৃত্ত শোষকগোষ্ঠী বাঙালীকে তার ন্যায্য অধিকার কোন দিনই দেবে না।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
জনপ্রিয় পোস্টসমূহ
-
আবদুল কাদের মোল্লা থাকেন রাজধানীর বড় মগবাজারের জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে গ্রিনভ্যালি অ্যাপার্টমেন্টে। তাঁর বিরুদ্ধে একাত্তর...
-
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান থাকেন রাজধানীর মিরপুর সাংবাদিক আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর সড়কের ১০৫ নম্বর বাড়িতে। সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সম্পাদক হিসেবে ত...
-
বিদেশী বন্ধুদের জন্য সম্মানা ক্রেস্ট মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রাখার জন্য বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা দেওয়া হবে। মানুষের চেতনায় লেখা হয়ে যাব...
-
১৪ মার্চ, ১৯৭১। ঢাকার উত্তাল রাজপথে সেদিন ছিল এক ব্যতিক্রর্মী চিত্র। মাঝিমাল্লারা সব বৈঠা হাতে এদিন রাজপথে নেমে আসে। সেদিনের রাজপথ ছিল মাঝিম...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন