নারী নির্যাতন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
নারী নির্যাতন লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
২৩ আগস্ট, ২০০৮
২০ আগস্ট, ২০০৮
এক কর্মকর্তার স্ত্রী
এই অংশটুকু নেয়া হয়েছে Amita Malik's The Year of the Vulture (New Delhi: Orient Longmans, 1972, pp. 141-42) থেকে।
তিনি (২৫ বছর বয়স) ছিলেন এক সরকারী কর্মকর্তার স্ত্রী। তাঁর তিন ছেলেমেয়ে ছিল। আর্মিরা প্রথমে তাঁর স্বামীকে নিয়ে যায়, আর প্রায় অর্ধ মৃত অবস্থায় ফেরত দেয়। তারপর অন্য একদল আর্মি আসে সকাল ৮-৯ টার দিকে। আর তাঁকে রেপ করে তাঁর স্বামী সন্তানদের সামনে। তারপর আরো একদল আর্মি আসে দুপুর ২.৩০ টার দিকে আর তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। এক ব্যাকারে আটকে রেখে তাঁকে বারবার রেপ করে প্রতি রাতে তিনি অজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত। তিন মাস পরে যখন তিনি ফিরে আসেন, তিনি ছিলেন প্রেগন্যান্ট। গ্রামের মানুষজন তাঁকে সহানুভুতি জানায় কিন্তু তাঁর স্বামী তাঁকে ফেরত নিতে অস্বীকার করে। গ্রামের মানুষ জোর করায় তাঁর স্বামী আত্মহত্যা করে। আমরা তাঁকে সাহায্য করার চেষ্টা চালাচ্ছি কিন্তু তিনি একটি কথাই বারবার বলে যাচ্ছেন “But why, why did they do it? It would have been better if we had both died”।
সংগ্রহ করা হয়েছে সামহোয়ারইনব্লগ থেকে।
লিখেছেন: রাশেদ
তিনি (২৫ বছর বয়স) ছিলেন এক সরকারী কর্মকর্তার স্ত্রী। তাঁর তিন ছেলেমেয়ে ছিল। আর্মিরা প্রথমে তাঁর স্বামীকে নিয়ে যায়, আর প্রায় অর্ধ মৃত অবস্থায় ফেরত দেয়। তারপর অন্য একদল আর্মি আসে সকাল ৮-৯ টার দিকে। আর তাঁকে রেপ করে তাঁর স্বামী সন্তানদের সামনে। তারপর আরো একদল আর্মি আসে দুপুর ২.৩০ টার দিকে আর তাঁকে তুলে নিয়ে যায়। এক ব্যাকারে আটকে রেখে তাঁকে বারবার রেপ করে প্রতি রাতে তিনি অজ্ঞান না হওয়া পর্যন্ত। তিন মাস পরে যখন তিনি ফিরে আসেন, তিনি ছিলেন প্রেগন্যান্ট। গ্রামের মানুষজন তাঁকে সহানুভুতি জানায় কিন্তু তাঁর স্বামী তাঁকে ফেরত নিতে অস্বীকার করে। গ্রামের মানুষ জোর করায় তাঁর স্বামী আত্মহত্যা করে। আমরা তাঁকে সাহায্য করার চেষ্টা চালাচ্ছি কিন্তু তিনি একটি কথাই বারবার বলে যাচ্ছেন “But why, why did they do it? It would have been better if we had both died”।
সংগ্রহ করা হয়েছে সামহোয়ারইনব্লগ থেকে।
লিখেছেন: রাশেদ
১৮ আগস্ট, ২০০৮
নারী নির্যাতন
এই অংশটুকু নেয়া হয়েছে রশিদ হায়দারের এডিট করা “১৯৭১: ভয়াবহ অভিজ্ঞতা” (ঢাকা, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী, ১৯৮৯) বইয়ের মো. আখতারুজ্জামান মন্ডলের “আমাদের মা বোন” অধ্যায় থেকে (পৃ. ১৯৭)।
আমরা ভুরুঙ্গামারি স্বাধীন করার জন্য ১১ই নভেম্বর থেকে পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে একযোগে আক্রমণ শুরু করি। ইন্ডিয়ান বিমান বাহিনী ঐদিন সকালে উপর্যপুরি বিমান হামলা শুরু করে। ১৩ই নভেম্বরে আমরা নিকটবর্তী হই আর ইন্ডিয়ান বিমান বাহিনীও তাদের অ্যাটাক জোরদার করে। ১৪ তারিখ সকালে পাকিস্তানিদের গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যায় আর আমরা ভুরুঙ্গামারিতে প্রবেশ করি জয় বাংলা বলতে বলতে। ৫০-৬০ জন পাকিস্তানি আর্মিকে আটক করি আর তাদের ক্যাপ্টেনকে (captain Ataullah Khan) পাই ব্যাঙ্কারে মৃত অবস্থায়। ঐ সময়েও সে এক মৃত নারীকে জড়িয়ে ধরেছিল। তাঁর সারা শরীরে নির্যাতনের দাগ। তাঁকে আমরা কবর দেই।
তখনো ভাবিনি আর কত নির্মম দৃশ্য দেখা বাকি আছে। ওয়্যারলেসে আমাকে সার্কেল অফিসে যেতে বলা হয়। সেখানে আমরা বেশ কিছু অল্প বয়সী নারীকে তালাবদ্ধ অবস্থায় পাই। তাদেরকে দরজা ভেঙ্গে আমরা মুক্ত করি। দরজা ভাঙ্গার পরে আমরা তাঁদেরকে নগ্ন, ধর্ষিত নির্যাতিত অবস্থায় দেখতে পাই। আমরা সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে চারটা লুঙ্গি আর চারটা বেডশিট ছুড়ে দেই ভিতরে। আমরা তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি কিন্তু তাঁরা খুবই শকড অবস্থায় ছিলেন। একজন ছিলেন ছয় সাত মাসের প্রেগনেন্ট। একজন ছিলেন ময়মনসিংহের কলেজ ছাত্রী। তাঁদেরকে চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়ান আর্মির গাড়িতে করে ইন্ডিয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা রাস্তার আশেপাশে গর্তে অনেক খুলি আবিস্কার করি। খুলিগুলোতে লম্বা চুল আর ছেঁড়া শাড়ি পেচানো ছিল, অনেকের হাতে চুড়ি ছিল। ভুরুঙ্গামারি হাই স্কুলের একটি রুমে ১৬ জন নির্যাতিত নারীকে উদ্ধার করি। আশেপাশের প্রাম থেকে তাদের নিয়ে আসা হয়েছিল। সার্কেল অফিসের বিভিন্ন রুমে আমরা অনেক প্রমান পাই যে নারীদের জানালার সাথে বেঁধে রেখে বারবার রেপ করা হয়েছিল। পুরা মেঝে ভরে ছিল রক্তে, লম্বা চুলে আর ছেঁড়া কাপড়ে।
সংগ্রহ করা হয়েছে সামহোয়ারইনব্লগ থেকে। লেখক: রাশেদ
আমরা ভুরুঙ্গামারি স্বাধীন করার জন্য ১১ই নভেম্বর থেকে পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে একযোগে আক্রমণ শুরু করি। ইন্ডিয়ান বিমান বাহিনী ঐদিন সকালে উপর্যপুরি বিমান হামলা শুরু করে। ১৩ই নভেম্বরে আমরা নিকটবর্তী হই আর ইন্ডিয়ান বিমান বাহিনীও তাদের অ্যাটাক জোরদার করে। ১৪ তারিখ সকালে পাকিস্তানিদের গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যায় আর আমরা ভুরুঙ্গামারিতে প্রবেশ করি জয় বাংলা বলতে বলতে। ৫০-৬০ জন পাকিস্তানি আর্মিকে আটক করি আর তাদের ক্যাপ্টেনকে (captain Ataullah Khan) পাই ব্যাঙ্কারে মৃত অবস্থায়। ঐ সময়েও সে এক মৃত নারীকে জড়িয়ে ধরেছিল। তাঁর সারা শরীরে নির্যাতনের দাগ। তাঁকে আমরা কবর দেই।
তখনো ভাবিনি আর কত নির্মম দৃশ্য দেখা বাকি আছে। ওয়্যারলেসে আমাকে সার্কেল অফিসে যেতে বলা হয়। সেখানে আমরা বেশ কিছু অল্প বয়সী নারীকে তালাবদ্ধ অবস্থায় পাই। তাদেরকে দরজা ভেঙ্গে আমরা মুক্ত করি। দরজা ভাঙ্গার পরে আমরা তাঁদেরকে নগ্ন, ধর্ষিত নির্যাতিত অবস্থায় দেখতে পাই। আমরা সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে চারটা লুঙ্গি আর চারটা বেডশিট ছুড়ে দেই ভিতরে। আমরা তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি কিন্তু তাঁরা খুবই শকড অবস্থায় ছিলেন। একজন ছিলেন ছয় সাত মাসের প্রেগনেন্ট। একজন ছিলেন ময়মনসিংহের কলেজ ছাত্রী। তাঁদেরকে চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়ান আর্মির গাড়িতে করে ইন্ডিয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা রাস্তার আশেপাশে গর্তে অনেক খুলি আবিস্কার করি। খুলিগুলোতে লম্বা চুল আর ছেঁড়া শাড়ি পেচানো ছিল, অনেকের হাতে চুড়ি ছিল। ভুরুঙ্গামারি হাই স্কুলের একটি রুমে ১৬ জন নির্যাতিত নারীকে উদ্ধার করি। আশেপাশের প্রাম থেকে তাদের নিয়ে আসা হয়েছিল। সার্কেল অফিসের বিভিন্ন রুমে আমরা অনেক প্রমান পাই যে নারীদের জানালার সাথে বেঁধে রেখে বারবার রেপ করা হয়েছিল। পুরা মেঝে ভরে ছিল রক্তে, লম্বা চুলে আর ছেঁড়া কাপড়ে।
সংগ্রহ করা হয়েছে সামহোয়ারইনব্লগ থেকে। লেখক: রাশেদ
১১ আগস্ট, ২০০৮
বীভৎস যৌন নির্যাতন, কিন্তু এড়িয়ে গেছেন সবাই
শেরিফ আল সায়ার
একাত্তরে আমাদের নারীদের ওপর পরিচালিত পাকিস্তানি সৈন্যদের যৌন নির্যাতনের ধরন কতোটা ভয়াবহ, কতোটা বীভৎস ছিল- যুদ্ধ চলাকালে এদেশ থেকে প্রকাশিত কোনো দৈনিকে তা প্রকাশিত হয় নি। প্রকাশিত হয়নি বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে পরিবেশিত বাংলাদেশের যুদ্ধ সংবাদেও।
১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পর থেকে জাতীয় দৈনিকগুলোতে পাকিস্তানিদের নারী নির্যাতনের বেশ কিছু সংবাদ প্রকাশিত হলেও ধর্ষণ ও অন্যান্য যৌন নির্যাতনের ধরণ, প্রকৃতি, শারীরিক, মানসিক প্রতিক্রিয়াগুলো নিয়ে খুব কমই গবেষণা হয়েছে। “স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস লিখন ও দলিল প্রামাণ্যকরন” প্রকল্পের তৎকালীন গবেষক, বর্তমানে ইংরেজী দৈনিক ডেইলি ষ্টারের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক আফসান চৌধুরী এজন্য ইতিহাস রচনার সনাতনী দৃষ্টিভঙ্গিকে দায়ী করে বলেছেন, দেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস লিখনে বরাবরই সশস্ত্র লড়াই, ক্ষমতাসীন পুরুষদের কৃতিত্ব গ্রন্থিত করার উদ্যোগ চলছে, কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে লাখ লাখ নারী অস্ত্র হাতে যুদ্ধ না করেও যেভাবে যুদ্ধের ভয়াবহতার শিকার হয়েছে, সনাতনী মানসিকতার কারণে কখনই তা নিয়ে গবেষণার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি সৈন্যদের যৌন সন্ত্রাসের ধরণ সম্পর্কে প্রথম তথ্য পাওয়া যায় ১৯৭৫ সালে প্রকাশিত আমেরিকান সাংবাদিক সুসান ব্রাউন মিলার রচিত “এগেইনেস্ট আওয়ার উইল: ম্যান, উইম্যান এন্ড রেপ” গ্রন্থে। দেশে এ বিষয়ক গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হয় খুব কম এবং যা হয়েছে ৮০ সালের পর থেকে। যুদ্ধের পর ৭৬-৭৭ সাল পর্যন্ত গ্রহণ করা এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাক্ষাৎকার একমাত্র প্রকাশিত হয় প্রামাণ্যকরণ প্রকল্পের অষ্টম খন্ডে। কিন্তু এই খন্ড যাচাই করে দেখা গেছে, এতে মোট গৃহীত ২৬২টি সাক্ষাৎকারের মধ্যে নির্যাতনের সাক্ষাৎকার মাত্র ২২টি।
প্রকল্পের তৎকালীন গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, প্রামাণ্যকরণ কমিটি তাদের কার্যালয়ে প্রায় সাড়ে ৩ লাখের বেশি পৃষ্ঠার তথ্য সংগ্রহ করেছে। এরমধ্যে মাত্র ১৫ হাজার পৃষ্ঠা গ্রন্থিত আছে। বাকি লাখ লাখ পৃষ্ঠার তথ্যের মধ্যে নারী নির্যাতন বিষয়ক বেশকিছু ঘটনা আছে। প্রকল্পের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক কে এম মহসীন বলেন, ‘ডকুমেন্টগুলো এখন জাতীয় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব গ্র্রহনের পারস্পরিক টানাহেচড়ায় অরক্ষিত অবস্থায় আছে। যতোদূর জানি, বেশ কিছু ডকুমেন্ট চুরিও হয়ে গেছে।’
মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত লিখিত সূত্র, সমাজকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৫ মার্চ থেকে পাকিস্তানিদের ধারাবাহিক ধর্ষণ উন্মত্ততার সঙ্গে মধ্য এপ্রিল থেকে যুক্ত হতে শুরু করে এদেশীয় দোসর রাজাকার, শান্তি কমিটি, আল বদর ও আল শামস্ বাহিনীর সদস্যরা। এরা বিভিন্ন স্থান থেকে নারীদের ধরে আনার পাশাপাশি ধর্ষকে অংশ নিয়েছে। প্রত্যেকটি ক্যান্টনমেন্ট, পুলিশ ব্যারাক, স্থায়ী সেনা বাঙ্কার ছাড়াও বিভিন্ন স্কুল কলেজ, সরকারি ভবন ধর্ষণের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
জানা যায়, একাত্তরে পুরো ৯ মাস পাকিস্তানি সৈন্যরা অতর্কিত হামলা চালিয়ে ঘটনাস্থলে, কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে বাঙালি নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে দিনের পর দিন আটকে রেখে ধর্ষণের যে ঘটনা ঘটিয়েছে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা গণধর্ষণ। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে বাড়ির পুরুষ সদস্য, স্বামীদের হত্যা করার পর নারীদের উপর ধর্ষণ নির্যাতন চালাতো পাকিস্তানী সৈন্যরা। ৯ থেকে শুরু করে ৭৫ বছরের বৃদ্ধা কেউই পাকিস্তানী সৈন্য বা তাদের দোসরদের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। সুসান ব্রাউনি মিলার তার গ্রন্থের ৮৩ পাতায় উল্লেখ করেছেন, কোনো কোনো মেয়েকে পাকসেনারা এক রাতে ৮০ বারও ধর্ষণ করেছে। ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির “যুদ্ধ ও নারী” গ্রন্থ থেকে জানা যায়, এক একটি গণধর্ষণে ৮/১০ থেকে শুরু করে ১০০ জন পাকসেনাও অংশ নিয়েছে। একাত্তরের ভয়াবহ ধর্ষণ সম্পর্কে একমাত্র জবানবন্দি দানকারী সাহসী ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী তার সাক্ষাৎকারে (একাত্তরের দুঃসহ স্মৃতি, সম্পাদনা শাহরিয়ার কবির) জানান, “রাতে ফিদাইর (উচ্চ পদস্থ পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তা) চিঠি নিয়ে ক্যাপ্টেন সুলতান, লে. কোরবান আর বেঙ্গল ট্রেডার্সের অবাঙালি মালিক ইউসুফ এরা আমাকে যশোরে নিয়ে যেত। যাওয়ার পথে গাড়ির ভেতরে তারা আমাকে ধর্ষণ করেছে। নির্মম, নৃশংস নির্যাতনের পর এক পর্যায়ে আমার বোধশক্তি লোপ পায়। ২৮ ঘন্টা সঙ্গাহীন ছিলাম”।
পাকিস্তানি সৈন্যদের ধর্ষণের বীভৎসতার ধরণ সম্পর্কে পুনর্বাসন সংস্থায় ধর্ষিতাদের নিবন্ধীকরণ ও দেখাশোনার সঙ্গে যুক্ত সমাজকর্মী মালেকা খান জানান, সংস্থায় আসা ধর্ষিত নারীদের প্রায় সবারই ছিল ক্ষত-বিক্ষত যৌনাঙ্গ। বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে ছিড়ে ফেলা রক্তাক্ত যোনিপথ, দাঁত দিয়ে ছিড়ে ফেলা স্তন, বেয়োনেট দিয়ে কেটে ফেলা স্তন-উরু এবং পশ্চাৎদেশে ছুরির আঘাত নিয়ে নারীরা পুনর্বাসন কেন্দ্রে আসতো।
পাকিস্তানি সৈন্যরা আমাদের নারীদের একাত্তরে কতো বীভৎসভাবে ধর্ষণসহ যৌন নির্যাতন করেছে তার ভয়াবহতা সবচেয়ে বেশী ধরা পড়ে ১৮ ফেব্রুয়ারীর ৭৪ সালে গৃহীত রাজারবাগ পুলিশ লাইনে একাত্তরে সুইপার হিসেবে কাজ করা রাবেয়া খাতুনের বর্ণনা থেকে। প্রামাণ্যকরণ প্রকল্পের অষ্টম খন্ডে গ্রন্থিত ঐ বর্ণনার কয়েকটি অংশঃ- রাবেয়া খাতুন জানান, ‘উন্মত্ত পাঞ্জাবি সেনারা নিরীহ বাঙালী মেয়েদের শুধুমাত্র ধর্ষণ করেই ছেড়ে দেয় নাই, অনেক পশু ছোট ছোট বালিকাদের ওপর পাশবিক অত্যাচার করে ওদের অসার রক্তাক্ত দেহ বাইরে এনে দুজনে দুপা দুদিকে টেনে ধরে চড়চড়িয়ে ছিঁড়ে ফেলে ছিল। পদস্থ সামরিক অফিসাররা সেই সকল মেয়েদের ওপর সম্মিলিত ধর্ষণ করতে করতে হঠাৎ একদিন তাকে ধরে ছুরি দিয়ে তার স্তন কেটে, পাছার মাংস কেটে, যোনি ও গুহ্যদ্বারের মধ্যে সম্পূর্ণ ছুরি চালিয়ে দিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে ওরা আনন্দ উপভোগ করতো ।’ রাবেয়া খাতুনের আরেকটি বর্ণনায় জানা যায়, ‘ প্রতিদিন রাজারবাগ পুলিশলাইনের ব্যারাক থেকে এবং হেডকোয়ার্টার অফিসে ওপর তলা থেকে বহু ধর্ষিত মেয়ের ক্ষত-বিক্ষত বিকৃত লাশ ওরা পায়ে রশি বেধে নিয়ে যায় এবং সেই জায়গায় রাজধানী থেকে ধরে আনা নতুন মেয়েদের চুলের সঙ্গে বেধে ধর্ষণ আরম্ভ করে দেয়।’
১৬ই ডিসেম্বর বিজয় অর্জনের পরও পাকিস্তানি সৈন্যরা বাঙ্কারে আটকে রেখে নির্বিচারে ধর্ষণ করেছে বাঙালী নারীদের। বিচারপতি কে এম সোবহান প্রত্যক্ষ দর্শনের অভিজ্ঞতা থেকে বলেন, ‘ ১৮ ডিসেম্বর মিরপুরে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া একজনকে খুঁজতে গিয়ে দেখি মাটির নিচে বাঙ্কার থেকে ২৩ জন সম্পূর্ণ উলঙ্গ, মাথা কামানো নারীকে ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে পাক আর্মিরা। ’
বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, পুরোপুরি পরিকল্পিতভাবে পরিচালিত পাক আর্মিদের ধর্ষণ-উত্তর অন্যান্য শারীরিক নির্যাতনের ফলে বেশ কিছু মেয়ে আত্মহত্যা করেছে, কাউকে কাউকে পাকসেনারা নিজেরাই হত্যা করেছে; আবার অনেকেই নিরুদ্দিষ্ট হয়ে গেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে অধ্যাপক ড. রতন লাল চক্রবর্তী ১৯৭২- এর প্রত্যক্ষদর্শনের অভিজ্ঞতা থেকে জানান, ‘ যুদ্ধের পর পর ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারী, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে উদ্বাস্তুর মতো ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে বেশ কিছু নারীকে। তাদের ড্রেসআপ এবং চলাফেরা থেকে আমরা অনেকেই নিশ্চিত জানতাম ওরা যুদ্ধের শিকার এবং ওদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। ’
তথ্যসূত্রঃ উক্ত লিখাটি ভোরের কাগজ, ১৮ মে ২০০২ ইং এ প্রকাশিত।
শেষ কথাঃ- এতো বিভৎস নির্যাতনের কোনো বিচার আজও হয়নি। বিশ্বের কাছে এসকল তথ্য অজানা। বিদেশ কেনো, আমাদের নতুন প্রজন্ম যুদ্ধের ভয়াবহতা সম্পর্কে কতোটুকু জানে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। এবং এই পাকিস্তানি সৈন্যদের সহায়তা দানকারী আলবদর আলশামস এখনও বীরের মত ঘুরে বেড়ায়। এই কি ছিল আমাদের নিয়তি?সংগৃহীত লেখাটি "বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধ- কয়েকটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন " সম্পাদনায় শামীমা বিনতে রহমান শীর্ষক বইতে প্রকাশিত হয়েছে।
আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। একটি কথা উল্লেখ করেছি - উক্ত লিখাটি ভোরের কাগজ, ১৮ মে ২০০২ ইং এ প্রকাশিত। উল্লেখ করা উচিত ছিল লেখাটি সংগৃহীত। আমি শুধু টাইপ করেছি মাত্র।
কথাগুলো এইজন্য বলা কারণ, অনেকে ভাবছেন পোস্টটি আমার লেখা তাই উল্লেখ করলাম লেখাটি সংগৃহীত।
আপনাদের ধন্যবাদ।
সংগ্রহ করা হয়েছে সামহোয়ার ইন ব্লগ থেকে।
৮ আগস্ট, ২০০৮
এক মুক্তিযোদ্ধা নারীর সাক্ষাৎকার
মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃক গৃহীত এক মুক্তিযোদ্ধা নারীর সাক্ষাৎকার।
নাম : তারাবান বেওয়া
স্বামী : আলতাফ চৌধুরী (১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে নিহত)
গ্রাম : প্রাণকৃষ্ণপুর, চরকোনা চরা,
ইউনিয়ন : পুটিমারা,
ডাকঘর : পুটিমারা,
থানা : নবাবগঞ্জ,
জেলা : দিনাজপুর
শিক্ষাগত যোগ্যতা : নিরক্ষর
১৯৭১ সালে বয়স : ৩০
১৯৭১ সালে পেশা : গৃহবধু
বর্তমান পেশা : গৃহিণী
প্র: ১৯৭১ সালে যুদ্ধের ঘটনা কি আপনার মনে পড়ে ?
উ: হ, মনে আছে, দেশে তহন যুদ্ধ লাগছিলো। খানেরা তহন আমাদের দেশের অনেক লোক মারছিলো।
প্র: পাকিস্তানি সৈন্যরা আপনাদের গ্রামে আক্রমণ করেছিলো কি ?
উ: হ, করছিলো।
প্র: আপনাদের এই গ্রামে কখন পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করলো ?
উ: আক্রমণ অনেক বার করছে। একদিন ভোরে আইসে চরম আক্রমণ করছিলো। তামাম গ্রাম হেরা ঘেরাও করছিলো। তামাম গ্রাম ঘেরাও করে ওরা পুরুষ মানুষ কাউক বাঁচাবার দেয় নাই। পুরুষ মানুষ কেউ পলাইতে পারে নাই। সবাক নিয়া যায়া ওরা মাইরে ফেলাইছে।
প্র: সেদিন আপনাদের গ্রামে পাকিস্তানি সৈন্যরা আর কি করেছিলো ?
উ: কাউক ডাক দিয়া নিয়া গেছে, কারু বাড়িতে আগুন লাগায় দিছে, কাউক মাইরে ফেলছে। মাইয়া মাইনষের ইজ্জত মারছে। কোনো অবস্হায় ওদের সাথে পারা যায় না। মোরা যে পাকেই দৌড়ে যাই সেই পাকেই খান, সে পাকেই মেয়ে মাইনষেক ওরা জাবড়ায়ে ধরে, সব পাকেই মেয়ে মাইনষেক ওরা ধরাধরি করছে। কোনো কিছু করি পারা যাই নাই। খানেদের হাতোত থিকা মোরা বাঁচপার পারি নাই কেউ। পুরুষ মানুষ সব ধরি নিয়া যায়া মাইরা ফালাইলো। ঐ সময় গ্রামে ব্যাটা ছেলে যা আছিলো হগলকেই ওরা মাইরে ফালাইছে। খানরা গেছে পর মোরা সবাই দৌড় মাইরে যায়া দেখি সবাই মইরা গেছে। মোরা ওইহানে গেছি পর খানরা ফির উল্টি আইছে। যখন ওরা উল্টি আইছে সখন ফির মোরা দৌড় মাইরেছি। মোর তিনটা ভাই ওই সময় মারা গেছে। যায়ে দেখি সব মরছে। তিনটা ভাই। ভাইয়ের বড় ব্যাটা, মোর বড় ব্যাটা। গাও গেরামের হগলকে এক জায়গায় নিছিলো খানরা। তারপর গুলি করছে।
প্র: আপনারা যখন লাশ আনতে গেলেন তখন পাকিস্তানি সৈন্যরা আবার ঘুরে এসে আপনাদেরকে ধাওয়া করছিলো।
উ: হ, ফির আসছিলো। আইসা ধাওয়া করছে।
প্র: তখন আপনি কি করলেন ?
উ: ফির দৌড় মাইরে এদিক ওদিক গেছি। কৈ গেছি সেটা এখন কওয়ার পারমু না। ফির আইসা দেখি ওরা সব মইরে গেছে। মোর স্বামী কইছিলো মুক পানি খিলাও। মুই পানিডাও খিলাইতে পারি নাই। তহনই ওই খানরা আইছে, মুই আবার দৌড় মারিছি। পরে আইসা দেখি স্বামী মোর মরছে।
প্র: আপনার পরিবারের কয়জনকে পাকিস্তানি সৈন্যরা হত্যা করেছিলো ?
উ: দুইজনাক নিয়া গেছিলো। মোর ব্যাটা আর স্বামী।
প্র: খানরা আর আসেনি এখানে ?
উ: কত অ্যালো আবার। দৌড়াদৌড়ি, কতো কেলেংকারী। ওরা আইছে, মোরা ভাতের পাতিল থুয়ে পলাইছি, ছালন (তরকারি) থুয়ে পলাইছি, খাওনও হয় নাই। ওরা খুব অত্যাচার কইরছে এই জায়গাত। খুব অত্যাচার। মোর ভাই খানগোরে দুধ দিয়া আইছে। মোর ভাই কতো কি দিছে। ফল দিয়া আইছে, কলা দিয়া আইছে, গাই দিলো, মুরগি দিলো, সব দিলো। হেরা তারপরও সবাক মারি ফেলালো। মেয়ে ছেলের ইজ্জত মারিলো। মোর তামাম জীবনটাই মাটি করি দিছে।
প্র: খানদের আপনারা মুরগি, দুধ, গরু-বাছুর দিয়েছেন ?
উ: হয়, হয়। বাঁচার জন্য মোরা দিছি। তাও মারিছে সোনা, তাও মারিছে। মোর ভাই বালটি ভইরে দুধ দিয়ে আইছে ৫/৭ জন মানুষের। তাও সবাক মাইরে ফেলছে।
প্র: পাকিস্তানি সৈন্যরা মহিলাদের উপর নির্যাতন করেছিলো কি ?
উ: হ, করছিলো। বেবাক মেয়েছেলেক ধরছিলো। ধরে আমাগো বাড়িত, এর ওর বাড়িত নিয়া গেছিলো। ঘরত আর আড়াল টাড়ালে নিয়া গেছিলো। ঘরত সান্ধাইয়া হেরা অত্যাচার করছিলো। ওগুলা করা শেষ হলি পর বাড়িত আগুন লাগায়ে দিছিলো। তখন সারা গাও শুইদ্ধে আগুন। খুব অত্যাচার করছিলো, খুবই অত্যাচার।
প্র: খানেরা কোনো মেয়েকে গুলি করে মারছিলো কি ?
উ: হ, মারিছে দুইজনকে।
প্র: তাদের নাম বলতে পারবেন ?
উ: ছয়না এক জনের নাম। আরেক জনের নাম সালু। হেরা হামার ঘরেত কানতেছিলো।
প্র: তারপরে আপনারা কি করলেন ?
উ: খানরা গেছে পর আইসে কান্দেছি। মরাগুলাক আশপাশের গ্রামের লোকরা নিয়া আইছে। মরাগুলাক গোছল করাইছে না করাইনি তা কওয়ার পারি না। মুই বেহুসের মতো। মোর তিনটা ভাই। ভাইয়ের ব্যাটা, মোর বড় ব্যাটা, স্বামী, সব এক জায়গাত মাটি দিছে।
প্র: তারপর ?
উ: এখানেই ছিলাম।
প্র: এরপর কি আর আসে নাই খানরা ?
উ: আসে নাই মানে ? আইছে। তহন দৌড়াদৌড়ি করি লুকাইছি।
সাক্ষাৎকার গ্রহণের তারিখ : নভেম্বর ০৪, ১৯৯৬
সংগ্রহ: সামহোয়ারইন ব্লগ থেকে
নাম : তারাবান বেওয়া
স্বামী : আলতাফ চৌধুরী (১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সৈন্যদের হাতে নিহত)
গ্রাম : প্রাণকৃষ্ণপুর, চরকোনা চরা,
ইউনিয়ন : পুটিমারা,
ডাকঘর : পুটিমারা,
থানা : নবাবগঞ্জ,
জেলা : দিনাজপুর
শিক্ষাগত যোগ্যতা : নিরক্ষর
১৯৭১ সালে বয়স : ৩০
১৯৭১ সালে পেশা : গৃহবধু
বর্তমান পেশা : গৃহিণী
প্র: ১৯৭১ সালে যুদ্ধের ঘটনা কি আপনার মনে পড়ে ?
উ: হ, মনে আছে, দেশে তহন যুদ্ধ লাগছিলো। খানেরা তহন আমাদের দেশের অনেক লোক মারছিলো।
প্র: পাকিস্তানি সৈন্যরা আপনাদের গ্রামে আক্রমণ করেছিলো কি ?
উ: হ, করছিলো।
প্র: আপনাদের এই গ্রামে কখন পাকিস্তানি বাহিনী আক্রমণ করলো ?
উ: আক্রমণ অনেক বার করছে। একদিন ভোরে আইসে চরম আক্রমণ করছিলো। তামাম গ্রাম হেরা ঘেরাও করছিলো। তামাম গ্রাম ঘেরাও করে ওরা পুরুষ মানুষ কাউক বাঁচাবার দেয় নাই। পুরুষ মানুষ কেউ পলাইতে পারে নাই। সবাক নিয়া যায়া ওরা মাইরে ফেলাইছে।
প্র: সেদিন আপনাদের গ্রামে পাকিস্তানি সৈন্যরা আর কি করেছিলো ?
উ: কাউক ডাক দিয়া নিয়া গেছে, কারু বাড়িতে আগুন লাগায় দিছে, কাউক মাইরে ফেলছে। মাইয়া মাইনষের ইজ্জত মারছে। কোনো অবস্হায় ওদের সাথে পারা যায় না। মোরা যে পাকেই দৌড়ে যাই সেই পাকেই খান, সে পাকেই মেয়ে মাইনষেক ওরা জাবড়ায়ে ধরে, সব পাকেই মেয়ে মাইনষেক ওরা ধরাধরি করছে। কোনো কিছু করি পারা যাই নাই। খানেদের হাতোত থিকা মোরা বাঁচপার পারি নাই কেউ। পুরুষ মানুষ সব ধরি নিয়া যায়া মাইরা ফালাইলো। ঐ সময় গ্রামে ব্যাটা ছেলে যা আছিলো হগলকেই ওরা মাইরে ফালাইছে। খানরা গেছে পর মোরা সবাই দৌড় মাইরে যায়া দেখি সবাই মইরা গেছে। মোরা ওইহানে গেছি পর খানরা ফির উল্টি আইছে। যখন ওরা উল্টি আইছে সখন ফির মোরা দৌড় মাইরেছি। মোর তিনটা ভাই ওই সময় মারা গেছে। যায়ে দেখি সব মরছে। তিনটা ভাই। ভাইয়ের বড় ব্যাটা, মোর বড় ব্যাটা। গাও গেরামের হগলকে এক জায়গায় নিছিলো খানরা। তারপর গুলি করছে।
প্র: আপনারা যখন লাশ আনতে গেলেন তখন পাকিস্তানি সৈন্যরা আবার ঘুরে এসে আপনাদেরকে ধাওয়া করছিলো।
উ: হ, ফির আসছিলো। আইসা ধাওয়া করছে।
প্র: তখন আপনি কি করলেন ?
উ: ফির দৌড় মাইরে এদিক ওদিক গেছি। কৈ গেছি সেটা এখন কওয়ার পারমু না। ফির আইসা দেখি ওরা সব মইরে গেছে। মোর স্বামী কইছিলো মুক পানি খিলাও। মুই পানিডাও খিলাইতে পারি নাই। তহনই ওই খানরা আইছে, মুই আবার দৌড় মারিছি। পরে আইসা দেখি স্বামী মোর মরছে।
প্র: আপনার পরিবারের কয়জনকে পাকিস্তানি সৈন্যরা হত্যা করেছিলো ?
উ: দুইজনাক নিয়া গেছিলো। মোর ব্যাটা আর স্বামী।
প্র: খানরা আর আসেনি এখানে ?
উ: কত অ্যালো আবার। দৌড়াদৌড়ি, কতো কেলেংকারী। ওরা আইছে, মোরা ভাতের পাতিল থুয়ে পলাইছি, ছালন (তরকারি) থুয়ে পলাইছি, খাওনও হয় নাই। ওরা খুব অত্যাচার কইরছে এই জায়গাত। খুব অত্যাচার। মোর ভাই খানগোরে দুধ দিয়া আইছে। মোর ভাই কতো কি দিছে। ফল দিয়া আইছে, কলা দিয়া আইছে, গাই দিলো, মুরগি দিলো, সব দিলো। হেরা তারপরও সবাক মারি ফেলালো। মেয়ে ছেলের ইজ্জত মারিলো। মোর তামাম জীবনটাই মাটি করি দিছে।
প্র: খানদের আপনারা মুরগি, দুধ, গরু-বাছুর দিয়েছেন ?
উ: হয়, হয়। বাঁচার জন্য মোরা দিছি। তাও মারিছে সোনা, তাও মারিছে। মোর ভাই বালটি ভইরে দুধ দিয়ে আইছে ৫/৭ জন মানুষের। তাও সবাক মাইরে ফেলছে।
প্র: পাকিস্তানি সৈন্যরা মহিলাদের উপর নির্যাতন করেছিলো কি ?
উ: হ, করছিলো। বেবাক মেয়েছেলেক ধরছিলো। ধরে আমাগো বাড়িত, এর ওর বাড়িত নিয়া গেছিলো। ঘরত আর আড়াল টাড়ালে নিয়া গেছিলো। ঘরত সান্ধাইয়া হেরা অত্যাচার করছিলো। ওগুলা করা শেষ হলি পর বাড়িত আগুন লাগায়ে দিছিলো। তখন সারা গাও শুইদ্ধে আগুন। খুব অত্যাচার করছিলো, খুবই অত্যাচার।
প্র: খানেরা কোনো মেয়েকে গুলি করে মারছিলো কি ?
উ: হ, মারিছে দুইজনকে।
প্র: তাদের নাম বলতে পারবেন ?
উ: ছয়না এক জনের নাম। আরেক জনের নাম সালু। হেরা হামার ঘরেত কানতেছিলো।
প্র: তারপরে আপনারা কি করলেন ?
উ: খানরা গেছে পর আইসে কান্দেছি। মরাগুলাক আশপাশের গ্রামের লোকরা নিয়া আইছে। মরাগুলাক গোছল করাইছে না করাইনি তা কওয়ার পারি না। মুই বেহুসের মতো। মোর তিনটা ভাই। ভাইয়ের ব্যাটা, মোর বড় ব্যাটা, স্বামী, সব এক জায়গাত মাটি দিছে।
প্র: তারপর ?
উ: এখানেই ছিলাম।
প্র: এরপর কি আর আসে নাই খানরা ?
উ: আসে নাই মানে ? আইছে। তহন দৌড়াদৌড়ি করি লুকাইছি।
সাক্ষাৎকার গ্রহণের তারিখ : নভেম্বর ০৪, ১৯৯৬
সংগ্রহ: সামহোয়ারইন ব্লগ থেকে
এতে সদস্যতা:
পোস্টগুলি (Atom)
জনপ্রিয় পোস্টসমূহ
-
আবদুল কাদের মোল্লা থাকেন রাজধানীর বড় মগবাজারের জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে গ্রিনভ্যালি অ্যাপার্টমেন্টে। তাঁর বিরুদ্ধে একাত্তর...
-
বিদেশী বন্ধুদের জন্য সম্মানা ক্রেস্ট মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রাখার জন্য বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা দেওয়া হবে। মানুষের চেতনায় লেখা হয়ে যাব...
-
এসএ খালেক সমকাল প্রতিবেদক মিরপুর ও পল্লবী নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৪ আসন থেকে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হয়েছেন এসএ খালেক। অভিযোগ রয়েছে, একাত্তরে তিনি ছি...
-
একাত্তরের এই দিনে ঢাকাসহ পুরো বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল এক বিক্ষুব্ধ জনপদে। এদিন ওড়ানো হয়েছিল মানচিত্র খচিত স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম পতাকা। এর আ...
-
এ এম রিয়াছাত আলী সমকাল প্রতিবেদক আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে চারদলীয় জোট প্রার্থী হয়েছেন জামায়াত নেতা এএম রিয়াছ...
-
মাওলানা হাবিবুর রহমান চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি দামুড়হুদা, জীবননগর ও চুয়াডাঙ্গা সদর নিয়ে গঠিত চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে এবার চারদলীয় জোটের প্রার্থী জামায়...
-
শান্তি কমিটি গঠনের সূত্রপাত। টিক্কা খানের সাথে বৈঠকরত ১২ জন রাজনৈতিক নেতার সমন্বয়ে গঠিত প্রতিনিধি দলের নেতা নুরুল আমিন ও গোলাম আযম। দৈনিক পূ...
-
লিখেছেন: সবাক আমাদের মুক্তিযুদ্ধে মিডিয়ার একটা ভূমিকা ছিলো। কখনও তা আমাদের পক্ষে গেছে আবার কখনও বিপক্ষে। ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ার তখন এত সহজ...
-
আবদুস সুবহান মিয়া সমকাল প্রতিবেদক পাবনা শহরের পাথরতলা মহল্লার মৃত নইমুদ্দিনের ছেলে আবুল বসর মোহাম্মদ আবদুস সুবহান মিয়া এবারের সংসদ নির্বাচনে...
-
বাংলাভাষায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কে নিয়ে এককভাবে গড়ে ওঠা সাইটের সংখ্যা খুব কম। স্বাধীনতার এত বছর পরেও শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে সাইটের সংখ্যা দ...