এই অংশটুকু নেয়া হয়েছে রশিদ হায়দারের এডিট করা “১৯৭১: ভয়াবহ অভিজ্ঞতা” (ঢাকা, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশনী, ১৯৮৯) বইয়ের মো. আখতারুজ্জামান মন্ডলের “আমাদের মা বোন” অধ্যায় থেকে (পৃ. ১৯৭)।
আমরা ভুরুঙ্গামারি স্বাধীন করার জন্য ১১ই নভেম্বর থেকে পশ্চিম, উত্তর ও পূর্ব দিক থেকে একযোগে আক্রমণ শুরু করি। ইন্ডিয়ান বিমান বাহিনী ঐদিন সকালে উপর্যপুরি বিমান হামলা শুরু করে। ১৩ই নভেম্বরে আমরা নিকটবর্তী হই আর ইন্ডিয়ান বিমান বাহিনীও তাদের অ্যাটাক জোরদার করে। ১৪ তারিখ সকালে পাকিস্তানিদের গোলাগুলি বন্ধ হয়ে যায় আর আমরা ভুরুঙ্গামারিতে প্রবেশ করি জয় বাংলা বলতে বলতে। ৫০-৬০ জন পাকিস্তানি আর্মিকে আটক করি আর তাদের ক্যাপ্টেনকে (captain Ataullah Khan) পাই ব্যাঙ্কারে মৃত অবস্থায়। ঐ সময়েও সে এক মৃত নারীকে জড়িয়ে ধরেছিল। তাঁর সারা শরীরে নির্যাতনের দাগ। তাঁকে আমরা কবর দেই।
তখনো ভাবিনি আর কত নির্মম দৃশ্য দেখা বাকি আছে। ওয়্যারলেসে আমাকে সার্কেল অফিসে যেতে বলা হয়। সেখানে আমরা বেশ কিছু অল্প বয়সী নারীকে তালাবদ্ধ অবস্থায় পাই। তাদেরকে দরজা ভেঙ্গে আমরা মুক্ত করি। দরজা ভাঙ্গার পরে আমরা তাঁদেরকে নগ্ন, ধর্ষিত নির্যাতিত অবস্থায় দেখতে পাই। আমরা সাথে সাথে রুম থেকে বের হয়ে চারটা লুঙ্গি আর চারটা বেডশিট ছুড়ে দেই ভিতরে। আমরা তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করি কিন্তু তাঁরা খুবই শকড অবস্থায় ছিলেন। একজন ছিলেন ছয় সাত মাসের প্রেগনেন্ট। একজন ছিলেন ময়মনসিংহের কলেজ ছাত্রী। তাঁদেরকে চিকিৎসার জন্য ইন্ডিয়ান আর্মির গাড়িতে করে ইন্ডিয়াতে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা রাস্তার আশেপাশে গর্তে অনেক খুলি আবিস্কার করি। খুলিগুলোতে লম্বা চুল আর ছেঁড়া শাড়ি পেচানো ছিল, অনেকের হাতে চুড়ি ছিল। ভুরুঙ্গামারি হাই স্কুলের একটি রুমে ১৬ জন নির্যাতিত নারীকে উদ্ধার করি। আশেপাশের প্রাম থেকে তাদের নিয়ে আসা হয়েছিল। সার্কেল অফিসের বিভিন্ন রুমে আমরা অনেক প্রমান পাই যে নারীদের জানালার সাথে বেঁধে রেখে বারবার রেপ করা হয়েছিল। পুরা মেঝে ভরে ছিল রক্তে, লম্বা চুলে আর ছেঁড়া কাপড়ে।
সংগ্রহ করা হয়েছে সামহোয়ারইনব্লগ থেকে। লেখক: রাশেদ
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
জনপ্রিয় পোস্টসমূহ
-
আবদুল কাদের মোল্লা থাকেন রাজধানীর বড় মগবাজারের জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে গ্রিনভ্যালি অ্যাপার্টমেন্টে। তাঁর বিরুদ্ধে একাত্তর...
-
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান থাকেন রাজধানীর মিরপুর সাংবাদিক আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর সড়কের ১০৫ নম্বর বাড়িতে। সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সম্পাদক হিসেবে ত...
-
বিদেশী বন্ধুদের জন্য সম্মানা ক্রেস্ট মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রাখার জন্য বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা দেওয়া হবে। মানুষের চেতনায় লেখা হয়ে যাব...
-
১৪ মার্চ, ১৯৭১। ঢাকার উত্তাল রাজপথে সেদিন ছিল এক ব্যতিক্রর্মী চিত্র। মাঝিমাল্লারা সব বৈঠা হাতে এদিন রাজপথে নেমে আসে। সেদিনের রাজপথ ছিল মাঝিম...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন