১৪ মার্চ, ১৯৭১। ঢাকার উত্তাল রাজপথে সেদিন ছিল এক ব্যতিক্রর্মী চিত্র। মাঝিমাল্লারা সব বৈঠা হাতে এদিন রাজপথে নেমে আসে। সেদিনের রাজপথ ছিল মাঝিমাল্লাদের দখলে। সামরিক আইনের ১১৫ ধারা জারির প্রতিবাদে সেদিন বেসরকারী কর্মচারীরাও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।
দেশের জনগণকে গণতান্ত্রিক অবস্থা থেকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদে খ্যাতিমান শিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন তাঁর 'হেলাল ইমতিয়াজ' খেতাব বর্জন করার ঘোষণা দেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদিন নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসার ব্যাপারে শর্তারোপ করেন। তিনি অবশ্য প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, যদি প্রেসিডেন্টের দাবি পূরণের ইচ্ছা নিয়ে আলোচনায় বসতে চান, তা হলে আমি বসতে পারি। তবে বঙ্গবন্ধু দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কোনভাবেই তৃতীয় কোন পর্ব সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবে না।
অন্যপক্ষে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর দেয়া ৬ দফা দাবি প্রত্যাখ্যান করেন। তবে ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ন্যাপ (ওয়ালী) নেতা খান আবদুল ওয়ালী খান পূর্ব পাকিস্তান সফরকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একান্তে আলাপ-আলোচনা করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বাঙালীর আন্দোলন এবং তাদের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেন।
একাত্তরের রক্তঝরা এই দিনে জাতীয় লীগ নেতা আতাউর রহমান অস্থায়ী সরকার গঠনের জন্য বঙ্গবন্ধুর কাছে দাবি জানান। এ সময় দেশের পত্রিকাগুলোতেও আন্দোলনকে সমর্থন করে সম্পাদকীয় লেখা চলতে থাকে। আওয়ামী লীগের সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমেদ অসহযোগ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৫ মার্চ পালনে ৩৫টি নতুন নির্দেশনা দেন। এ সময় সমগ্র বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান) আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চলতে থাকে।
এই দিনে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে ছাত্র ইউনিয়নের এক সমাবেশ থেকে দেশের ৭ কোটি জনতাকে সৈনিক হিসেবে সংগ্রামে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদের (বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম (বর্তমানে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক)। একই দিনে শিল্প সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা শিল্প সংগ্রাম গঠন করেন।
বাঙালীর স্বাধীনতার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ঢাকার কবি-সাহিত্যিকরা 'লেখক সংগ্রাম শিবির' নামে একটি কমিটি গঠন করেছেন। আহ্বায়ক : হাসান হাফিজুর রহমান। সদস্য : সিকান্দার আবু জাফর, আহমদ শরীফ, শওকত ওসমান, শামসুর রাহমান, বদরুদ্দীন ওমর, রণেশ দাসগুপ্ত, সাইয়িদ আতীকুল্লাহ, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, রোকনুজ্জামান খান, আবদুর গাফ্ফার চৌধুরী, সুফিয়া কামাল, জহির রায়হান, আবদুল গনি হাজারীসহ অনেকে।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
জনপ্রিয় পোস্টসমূহ
-
আবদুল কাদের মোল্লা থাকেন রাজধানীর বড় মগবাজারের জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে গ্রিনভ্যালি অ্যাপার্টমেন্টে। তাঁর বিরুদ্ধে একাত্তর...
-
- একরামুল হক শামীম : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭১ সালে নারীর ওপর যে বীভৎস নির্যাতন চালানো হয়েছিল তা মানব ইতিহাসে বিরল। নারীর প্রতি অত...
-
বিদেশী বন্ধুদের জন্য সম্মানা ক্রেস্ট মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রাখার জন্য বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা দেওয়া হবে। মানুষের চেতনায় লেখা হয়ে যাব...
-
সাধারণত আমরা বিভিন্ন জাতীয় দিবসে বাড়িতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করি। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে প্রতিদিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করতে হয়। এ বিষয়ে আমাদের কা...
-
আজহারুল ইসলাম রংপুর অফিস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বাঙালি নিধনে পাক হানাদার বাহিনীর সহায়তায় গঠিত কুখ্যাত রাজাকার-আলবদর বাহিনীর নেতৃস্থানীয়দের অন্য...
-
প্রিন্সিপাল রুহুল কুদ্দুস সমকাল প্রতিবেদক কয়রা ও পাইকগাছা উপজেলার একাংশ নিয়ে গঠিত খুলনা-৬ আসন থেকে চারদলীয় জোটের প্রার্থী হয়েছেন প্রিন্সিপাল...
-
১৯৭১ সালের এই দিনে প্রতিবাদ প্রতিরোধ বিদ্রোহ বিক্ষোভে সুপ্ত আগ্নেয়গিরি ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠেছিল। শেকল ছেঁড়ার অদম্য আকাঙ্ক্ষায় দুরন্ত দুর্বার হ...
-
এ এম রিয়াছাত আলী সমকাল প্রতিবেদক আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে চারদলীয় জোট প্রার্থী হয়েছেন জামায়াত নেতা এএম রিয়াছ...
-
শান্তি কমিটি গঠনের সূত্রপাত। টিক্কা খানের সাথে বৈঠকরত ১২ জন রাজনৈতিক নেতার সমন্বয়ে গঠিত প্রতিনিধি দলের নেতা নুরুল আমিন ও গোলাম আযম। দৈনিক পূ...
-
আজ ৯ মার্চ। ১৯৭১-এর উত্তাল-অগ্নিগর্ভ দিনগুলোর একটি। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের পর থেকে দেশ তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে থাকে। এই দিনে মিছিলে...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন