রক্তঝরা একাত্তরের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ আজ। এদিনে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন একটি ভিন্নমাত্রা পেয়েছিল। রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের স্বাধীনতার ডাকে রক্ত টগবগিয়ে উঠেছিল মুক্তিপাগল বাঙালীর। মুহূর্তেই উদ্বেল হয়ে ওঠে জনতার সমুদ্র। মুহুর্মুহু সেস্নাগানে কেঁপে ওঠে বাংলার আকাশ। নড়ে ওঠে হাতের ঝাণ্ডায় তাদের গর্বিত লাল-সবুজ পতাকা, পতাকার ভেতরে সোনালি রঙে অাঁকা বাংলাদেশের মানচিত্র। বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণেই মুক্তিপাগল বাঙালী জাতিকে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিল।
একাত্তরের এই ঐতিহাসিক দিনে কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ববাংলা সমন্বয় কমিটি স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লৰ্যে গেরিলা যুদ্ধের আহ্বান জানান। তাদের প্রচারপত্রে আহ্বান জানানো হয়- 'আঘাত হানো', 'সশস্ত্র বিপ্লব শুরু করো', 'জনতার স্বাধীন পূর্ববাংলা কায়েম করো'। পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- ন্যাপ (মুজাফ্ফর) পাকিস্তানের শাসনতন্ত্রের জন্য ১৭ দফা প্রস্তাব দেয়। এতে বিচ্ছিন্ন হওয়ার অধিকারসহ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দাবি করা হয়।
৭ মার্চ ঢাকা ছিল লাখো মানুষের শহর। বিভিন্ন জেলা থেকে মানুষ ছুটে এসেছিল বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য। 'বীর বাঙালী অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো' শ্লোগানে ঢাকা শহর উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। কখন ঘটবে বিস্ফোরণ এমন একটি পরিস্থিতি বিরাজ করে সারা শহরে। শেখ মুজিব নিজ মুখে স্বাধীনতার ঘোষণা করলে তাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী বানিয়ে নির্বিচারে বাঙালী নিধনের ঘৃণ্য পরিকল্পনা বাসত্মবায়নে ভারি অস্ত্রেশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে প্রস্তুত ছিল পাকিস্তানী সামরিক বাহিনী। কিন্তু বঙ্গবন্ধু সে সুযোগ দেননি হানাদারদের। টানটান উত্তেজনার মধ্যে রেসকোর্সে অনুষ্ঠিত হয় এই সমাবেশ।
বিচ্ছিন্নতাবাদীর দায় চাপিয়ে দেশের স্বাধীনতাকে যাতে পাকিস্তানী সামরিক জান্তারা বিলম্বিত করতে না পারে সেজন্য বঙ্গবন্ধু পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ একটি ভাষণ দেন। সরাসরি না দিয়ে বঙ্গবন্ধু পরোক্ষোভাবে স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দেন। আর বঙ্গবন্ধুর বজ্রনির্ঘোষ কণ্ঠে এ নির্দেশ পেয়েই নিরস্ত্র বাঙালী জাতি সশস্ত্র হয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকহানাদারদের বিরুদ্ধে। বাঙালীর দেশপ্রেমের অগ্নিশিখায় পরাস্ত করে প্রশিক্ষিত পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীকে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ছিনিয়ে আনে মহামূল্যবান স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
জনপ্রিয় পোস্টসমূহ
-
মুহাম্মদ কামারুজ্জামান থাকেন রাজধানীর মিরপুর সাংবাদিক আবাসিক এলাকার ৪ নম্বর সড়কের ১০৫ নম্বর বাড়িতে। সাপ্তাহিক সোনার বাংলার সম্পাদক হিসেবে ত...
-
এ এম রিয়াছাত আলী সমকাল প্রতিবেদক আশাশুনি ও শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৩ আসন থেকে চারদলীয় জোট প্রার্থী হয়েছেন জামায়াত নেতা এএম রিয়াছ...
-
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এক দীর্ঘকালীন সংগ্রামের ইতিহাস। অসংখ্য রাজনৈতিক সামাজিক সংগ্রামের ঘটনা এক দীর্ঘ ধারাবাহিকতা শেষে নতুন দেশের জন্মের মাধ্...
-
বিদেশী বন্ধুদের জন্য সম্মানা ক্রেস্ট মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদান রাখার জন্য বিদেশী বন্ধুদের সম্মাননা দেওয়া হবে। মানুষের চেতনায় লেখা হয়ে যাব...
-
আবদুল কাদের মোল্লা থাকেন রাজধানীর বড় মগবাজারের জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে গ্রিনভ্যালি অ্যাপার্টমেন্টে। তাঁর বিরুদ্ধে একাত্তর...
-
মাওলানা হাবিবুর রহমান চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি দামুড়হুদা, জীবননগর ও চুয়াডাঙ্গা সদর নিয়ে গঠিত চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে এবার চারদলীয় জোটের প্রার্থী জামায়...
-
১৬ ডিসেম্বরের পর বিভিন্ন দৈনিকে আত্মগোপনকারী মওলানা মান্নানকে ধরিয়ে দেবার আবেদন প্রকাশিত হয়। ০৭-০৫-১৯৭২ দৈনিক আজাদে প্রকাশিত মওলানা মান্নানক...
-
- একরামুল হক শামীম : শিক্ষার্থী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭১ সালে নারীর ওপর যে বীভৎস নির্যাতন চালানো হয়েছিল তা মানব ইতিহাসে বিরল। নারীর প্রতি অত...
-
আবদুল খালেক মণ্ডল নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা এবারো সাবেক জামায়াত এমপি আবদুল খালেক মণ্ডল সাতক্ষীরা-২ আসন (সদর) থেকে চারদলীয় জোটের মনোনয়ন পেয়...
-
শান্তি কমিটি গঠনের সূত্রপাত। টিক্কা খানের সাথে বৈঠকরত ১২ জন রাজনৈতিক নেতার সমন্বয়ে গঠিত প্রতিনিধি দলের নেতা নুরুল আমিন ও গোলাম আযম। দৈনিক পূ...
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন